খেজুরের গুড় আমাদের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শীতের সকালে ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, কিংবা দুধের সঙ্গে খেজুরের গুড়ের স্বাদ অতুলনীয়। তবে বাজারে মিশ্রিত গুড়ের কারণে অনেকেই খাঁটি খেজুরের গুড় কেনার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। মিশ্রিত গুড়ে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকায় খাঁটি গুড় চেনার কৌশল জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা জানব খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার কয়েকটি কার্যকর উপায়।

১. গন্ধের মাধ্যমে যাচাই

খাঁটি খেজুরের গুড়ে স্বাভাবিকভাবেই খেজুর রসের মিষ্টি গন্ধ থাকে। এটি খুবই প্রাকৃতিক এবং তীব্র। তবে মিশ্রিত গুড়ে রাসায়নিক গন্ধ বা তীব্র চিনির গন্ধ থাকতে পারে। খাঁটি গুড় শুঁকে দেখলে একটি স্বাভাবিক মিষ্টি সুবাস পাওয়া যায়, যা অন্য কোনো গুড়ে পাওয়া যায় না।

২. স্বাদের পার্থক্য

খাঁটি খেজুরের গুড়ে স্বাদ অনেকটাই মোলায়েম ও প্রাকৃতিক। এটি খেলে মুখে একটি প্রশান্তি অনুভূত হয় এবং চিনির অতিরিক্ত মিষ্টি অনুভূতি থাকে না। অন্যদিকে, ভেজালযুক্ত গুড় খেলে চিনির অতিরিক্ত মিষ্টি বা রাসায়নিকের তীব্র স্বাদ টের পাওয়া যায়।

৩. রঙের বৈশিষ্ট্য

খাঁটি খেজুরের গুড় সাধারণত হালকা বাদামি বা সোনালী রঙের হয়। এটি স্বাভাবিকভাবেই চকচকে দেখায় না। কিন্তু মিশ্রিত গুড় খুব চকচকে এবং গাঢ় বাদামি রঙের হতে পারে। অনেক সময় রাসায়নিক মেশানোর ফলে এটি অস্বাভাবিক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

৪. গুড়ের দৃঢ়তা

খাঁটি গুড় সাধারণত সামান্য নরম এবং হাতে ভাঙলে সহজেই ভেঙে যায়। এটি কখনোই খুব বেশি শক্ত হয় না। কিন্তু ভেজাল গুড় অতিরিক্ত শক্ত এবং ভাঙতে কষ্ট হয়। এর পেছনে চিনির প্রভাব থাকতে পারে, যা গুড়ের প্রাকৃতিক নরমতা নষ্ট করে।

৫. ফেনার উপস্থিতি

খাঁটি খেজুরের গুড় তৈরির সময় প্রাকৃতিকভাবে কিছু ফেনা তৈরি হয়। এই ফেনা গুড়ে মিশে একটি স্বাভাবিক টেক্সচার তৈরি করে। কিন্তু রাসায়নিক মেশানো গুড়ে এই প্রাকৃতিক ফেনার উপস্থিতি দেখা যায় না।

৬. পানিতে গুড় পরীক্ষা

খাঁটি খেজুরের গুড় পরীক্ষা করার একটি সহজ উপায় হলো পানিতে গুড় মেশানো। একটি গ্লাস পানিতে অল্প গুড় দিন। খাঁটি গুড় ধীরে ধীরে পানিতে মিশে যাবে এবং তলানিতে জমা হবে না। অন্যদিকে, মিশ্রিত গুড় দ্রুত তলানিতে বসে যেতে পারে এবং অস্বাভাবিকভাবে গাঢ় দেখাতে পারে।

৭. গুড় কেনার উৎস

গুড় কেনার সময় বিশ্বস্ত উৎস থেকে কেনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের পরিচিত কৃষক বা গাছির কাছ থেকে সরাসরি গুড় কিনলে মিশ্রণের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। বাজারের প্যাকেটজাত গুড়ে অনেক সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ বা রাসায়নিক মেশানোর সম্ভাবনা থাকে।

৮. মূল্য যাচাই

খাঁটি খেজুরের গুড়ের দাম সাধারণত একটু বেশি হয়। যদি খুব কম দামে গুড় বিক্রি করা হয়, তাহলে সেটি মিশ্রিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দাম দেখে বিচার করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

৯. ল্যাব পরীক্ষার প্রয়োজন

যদি আপনার সন্দেহ থাকে এবং নিশ্চিত হতে চান, তবে গুড় ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো যেতে পারে। বিশেষত বড় পরিমাণে গুড় কেনার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হতে পারে।

সতর্কতামূলক পরামর্শ

খেজুরের গুড়ে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা বাড়ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। রাসায়নিক মেশানো গুড় খেলে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হতে পারে। তাই গুড় কেনার সময় অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এবং খাঁটি গুড় চেনার কৌশলগুলো ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার

খাঁটি খেজুরের গুড় চেনা সহজ কাজ নয়, তবে সঠিক জ্ঞান এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকলে এটি সম্ভব। খাঁটি গুড়ের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ মিশ্রিত গুড়ের চেয়ে অনেক ভালো। তাই নিজের এবং পরিবারের সুস্থতার জন্য সবসময় খাঁটি খেজুরের গুড় কেনা নিশ্চিত করুন।

Leave a Reply